Back

আমার একটি স্বপ্ন ছিল

স্বপ্ন এক সদা জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের নাম। যাকে দিনে রাতে সবসময় দৃষ্টির নাগালে রাখা যায়। শুধু রাতের আধারেই তাকে কল্পনা করতে হয়না।
যুগে যুগে যারা পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। পৃথিবীটাকে যারা মিথ্যা, হানাহানি, ধনি-দরিদ্র, কালো-সাদার বিভেদের শক্ত দেয়াল থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখতেন।যাদের স্বপ্নে ছিলো মানবতার মুক্তির চিন্তা, যারা জীবনভর নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে গেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে , সকল জঞ্জাল সরিয়ে সমাজকে মুক্ত করার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত ছিলেন যে সকল মহামানব তাদেরই একজন আমেরিকার ইতিহাস পালটে দেওয়া নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।
শান্তিকামী মানুষের চির অনুস্মরণীয় এই নেতা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের হয়ে সবার সামনে নিজেকে উৎসর্গ করেন।তিনি একাধারে ছিলেন আমেরিকার ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রী, সমাজ সংস্কারক, মানবাধিকারকর্মী, আফ্রো-আমেরিকান সিভিল রাইট মুভমেন্ট এর নেতা।তিনি নিজে বংশ পরম্পরায় একজন ধর্মযাজক ছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মের দীক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি প্রভু যিশুর বানী অনুযায়ী সকলের অধিকার রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।
আমৃত্যু কালো মানুষদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এই নেতা ১৫ই জানুয়ারি,১৯২৯ জর্জিয়ার আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার বয়স ৬ বছর তখনই তিনি সাদা কালোর বিভেদের দেয়াল স্পষ্ট দেখতে পান।তার স্কুলে এক সাদা বালকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু ঐ বালকের বাবা তাকে কিংয়ের সাথে মিশতে নিষেধ করেন।মূলত তখন থেকেই কিংয়ের মনে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংকল্প জেগে উঠে। তিনি এতটাই মেধাবী ছিলেন যে তাকে ক্লাস নাইন আর ক্লাস টুয়েলভ পড়তেই হয়নি।১৯৪৮ সালে তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর লাভ করেন।এরপর ১৯৫৫ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
 
 
তার জীবনের লক্ষ্য ছিলো তার মেধা ও মনঙ্কে কাজে লাগিয়ে নিপীড়িত জনগনের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৫৯ সালে ভারতে সফর করেন।১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির সমতা অর্জন এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লুথার কিং, বেয়ারড রাস্তিন এবং আরও ছয়টি সংগঠনের সহায়তায় মার্চ অন ওয়াশিংটন ফর জব এন্ড ফ্রিডম (March On Washington for Job and Freedom.) নামে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন। এই সমাবেশটি ছিলো আমেরিকার ইতিহাসে সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মহা-সমাবেশ। এই সমাবেশে যোগ দেবার জন্য অসংখ্য মানুষ ২০০০ টি বাস, ২১ টি স্পেশাল ট্রেন, ১০ টি এয়ারলাইন্স এর সকল ফ্লাইট ও অসংখ্য গাড়িতে করে ওয়াশিংটনে এসেছিল।
 
 
সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লিঙ্কন মেমোরিয়ালে। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছিল ঐ মহা-সমাবেশে। “I Have a Dream”(‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’) নামে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে দেয়া সেই বিখ্যাত ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সেরা বাগ্মিতার দৃষ্টান্তগুলোর অন্যতম হয়ে আছে।
 
 
তার এ কালজয়ী ভাষণের ফলস্বরূপ কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পায়।কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পায়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় তার এই ভাষণের কথা। ১৯৬৪ সালের ১৪ই অক্টোবর তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
 
 
যুক্তরাষ্ট্রের সকল জনগণকে এক কাতারে আনাই ছিলো তার মূল লক্ষ্য ।তার ঐতিহাসিক সংগ্রামের কারণেই আমেরিকা একটি একতাবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে।আজ শান্তিতে নোবেল দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক চলে তার বেলাতে সেরকমটা হয়নি। কারন শান্তিই ছিলো তার জীবনের মুল আরাধ্য বস্তু।তিনি শিখিয়ে গেছেন সৎ সাহস আর সদ্বিচ্ছা দ্বারা পৃথিবীর সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।তিনি শিখিয়ে গেছেন কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়,কিভাবে মানুষের ভালোবাসা আদায় করতে হয়।
 
সর্বদা শত্রুকে ভালবাসতে শিখিয়ে যাওয়া এই অবিসংবাদিত এই মহান নেতা ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল একজন শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী যুবক জেমস আর্ল রে দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
 
 

 

 

shuvro
shuvro
বেঁচে থাকতে ভালোবাসি।

1 comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।