এই সময়ে মোটামুটি সবাই-ই সবকিছু জানি।
তাও, নিজের একটা তাড়ণা থেকে এই কথাগুলা লেখা। কিছু তথ্য একসাথে সাম আপ করা আর কি!
কতগুলা বিষয় আছে যেগুলা এখন না জানলেও চলে। করোনা আসছে কবে, PHEIC কবে সতর্ক করসে আমাদের, প্যান্ডেমিক ঘোষণা করসে কবে WHO, দেশের অবস্থা কি এইসব।
বিষয়টা হইলো, রাষ্ট্র আমাদের বাঁচানোর জন্য যে তেমন কিছু করতে পারবে না, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন বাঁচতে হবে আমাদের। নিজেদের। অন্তত সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে শেষ পর্যন্ত।
প্রকৃতির সবচেয়ে মজার বিষয় হইলো, তুমি ফাইট করতে পারলে টিকবা। ডারউইন বইলা গেছেন, সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্ট। তোমারে ফিট থাকতে হবে, সারভাইভ করতে হবে।
ফিট কেমনে থাকবো তার আগে বলি, এই কোভিড-১৯ রোগ ক্যাম্নে শরীরটারে খায়ে ফেলে।
ভাইরাস যায় চোখ, মুখ, নাক দিয়ে। জাস্ট ৩ টা ওয়ে। সোজা যায়া আঘাত করে ফুসফুসকে।
ফুসফুসের যে ছোট ছোট কোষ এগুলারে বলে- এলভিওলাই। এই এইটারে ধরে। ধরে মেরে ফেলে। একই সাথে বংশ বিস্তার করতে থাকে পাগলের মতো! একটার পর একটা এলভিওলাইকে খাইতে থাকে।
ফুসফুস যদি খায়েই ফেলে বাঁচার কোন উপায় আছে? নাই। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে ডিরেক্ট আসমান।
তাইলে মানুষ বাঁচে কেম্নে!
আরো পড়ুনঃ জ্যোতির্বিদ্যাঃ মহাবিশ্বের বিজ্ঞান
এইখানেই মজার বিষয়। চলে যাইতে হবে আগের কালে। যখন কোন ওষুধ আবিষ্কার হয় নাই, তখন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া রোগ ছিলো না? ছিল। মানুষ তাও বাঁচছে।
কারণ, প্রকৃতি প্রতিটা জীবের মধ্যেই বাইরের শত্রুর সাথে ফাইট করার উপাদান দিসে। এইটাই হইলো “ইমিউন সিস্টেম“।
আমাদের শরীরে আছে নানান কিসিমের ইমিউন সেল! টি সেল, এন সেল আরো হাবিজাবি অনেক কিছু।
যখন এরা বুঝে যে বাইরের একটা আবর্জনা ঢুকসে, সাথে সাথে কাজ শুরু করে দেয়। মারতে থাকে এদের।
আমরা গেইম খেলি না? অনেকটা ওরকম। দুইটা বার থাকে।
লাল বার করোনা ভাইরাসের।
সবুজ বার আমাদের ইমিউন সেলের। মারামারি চলতে থাকে। লালটাও কমে, সবুজটাও কমতে থাকে। যার সবুজের পাওয়ার বেশি, তার ক্ষেত্রে লাল আগে শেষ হয়। যার পাওয়ার কম, সে মারা যায়।
এইটাই বিষয়।
তো, আগেভাগে প্রস্তুত হইতে হবে। সম্ভবত এখনো কিছুটা সময় হাতে আছে আমাদের।
এবার তাইলে আসি কি খাইলে বা কিভাবে থাকলে আমাদের সবুজ বারের পাওয়ারটা বাড়ানো যায়।
লিস্ট ধরে আগাই।
প্রথমে আসি খাবার। এটা নিয়ে বিস্তারিত বলবো।
কিছু খাবার আছে যেগুলা ইমিউন সিস্টেমের পাওয়ার বাড়ায়।
- পেঁপে- ভিটামিন সি তে ভরপুর। সাথে পটাশিয়াম, এন্টিওক্সিডেন্ট এগুলা আছে।
- রসুন- এরে বলা হয় ” ইমিউন বুস্টিং সুপারস্টার”।
- গ্রীন টি- L-theanin প্রোটিন থাকে যা T-cell কে শক্তিশালী করে।
- আদা
- ব্রোকলি- একধরণের ফুলকপি। সবুজ ফুলকপি। ঢাকাতে পাওয়া যায়। বাকি জাগায় জানা নাই।
- লেবু
- আপেল- এর মধ্যে পেকটিন আছে, যা ইমিউন সিস্টেমের পাওয়ার বাড়ায়।
- আমলকি- সেইম, প্রচুর ভিটামিন সি এতে
- দুধ, ডিম, নানা টাইপের সবুজ শাকসবজি।
- কিছু প্রোবায়োটিক্স খাইতে পারি। ২ টাইপের আছে এগুলা। ল্যাক্টো ব্যাসিলাস যেমন- ইয়োগার্ট।
- আরেকটা বাইফিডোব্যাক্টেরিয়াম, বিভিন্ন ডেইরী প্রোডাক্টে থাকে। এছাড়া, অলিভস, চিজ এগুলাতে থাকে।
- ফাস্ট ফুড এড়ায়ে যাইতে হবে। অন্তত এই কয়দিন ভাই! বাসায় বসে কম রান্না করা খাবার খাইতে হবে। বেশি হিটে বা অনেক প্রসেসড খাবার আমাদের ইন্টেস্টাইনের Anti-Bacterial গুলোকে নষ্ট করে দেয়।
এখন আসি কয়েকটা খাবারের বিষয়ে, যেগুলা সহজে খাইতে পারবো, বানাইতে পারবো ইজিলি।
- আদা-লেবু দিয়ে চা।
- লেবুর শরবত।
- মধু আর রসুন। রসুনের কোয়া আলাদা করে মধুর পাত্রের মধ্যে ঢেলে দিলাম। এরপর মধুর ওই পাত্র ফ্রিজে রেখে দিলাম। ৫ দিন ইনাফ। এরপর প্রতিদিন একটা করে রসুনের কোয়া বের করে ফ্রিজ থেকে খাইলাম। ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করবে অনেকখানি এই ৩ টা খাবার।
আর এর বাইরে রেগুলার কিছু বিষয় তো শুনতেসেই। যেমন-
- চোখ মুখ নাক সেইফ রাখতে হবে।
- হাত ধুইতে হবে। স্যানিটাইজার লাগবে? হ্যান্ডওয়াশ লাগবে? নাহ! ওইগুলা প্রোডাক্ট বিক্রির কথা। সাবান দিয়া ধুইলেও হবে। কারণ, ক্ষারীয় যেকোন কিছুই এই ভাইরাসের উপরের লেয়ারটাকে নষ্ট করে দেয়। আর সে মারা যায়। ক্ষারীয় সেটা যেকোন সাবান, স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডওয়াশ হইলেই হবে।
তো ছিলাম, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা নিয়ে।
শুধু খাদ্য না, আরো কিছু বিষয় আছে।
১) ঘুম (৬-৮ ঘণ্টা)
হিসেব সোজা। আজাইরা পইড়া আছি। ফেইসবুকে কমেন্টের ঝড় বসাইতেসি, এরপর আইসা ১০-১৫ ঘণ্টা ঘুমাইতেসি। সব করেন, কিন্তু ঘুম হইতে হবে নিয়ম মেনে। শরীরের জন্য কম হলেও ইফেক্ট পড়ে। তো ঘুম পরিমিত।
২) স্ট্রেস রিলিজ করতে হবে
কাইকোগ্লাসার নামে এক বিজ্ঞানী একটা পরীক্ষা করসেন। ৪৯ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী নিয়ে। পরীক্ষার এক মাস আগে। আর পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে। পরীক্ষার সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই স্ট্রেস থাকে বেশি।
দেখা গেছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে রোগ শোকে আক্রান্ত হইসে বেশি। কারণ, ওই যে ইমিউন সিস্টেমের T-cell এটা স্ট্রেসের কারণে কমে গেছে। যা ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াকে ট্যাকেল দিতে পারেনাই।
যদিও সময়টাই খারাপ। স্ট্রেস আসে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, ভালোবাসার মানুষের জন্য।
কিন্তু তাও, স্ট্রেস কমাইতে হবে। চেষ্টা করতে হবে।
ইয়োগা একটা ভালো মাধ্যম। মেডিটেশন একটা মাধ্যম।
সকালে উঠেই ১০-২০ মিনিট মেডিটেশন করে নিলাম। অনেক স্ট্রেস রিলিফ হয়। অনেক এপ আছে। Daily Yoga নামে একটা এপ ব্যবহার করি। ইজিলি দেখে দেখে ইয়োগা, মেডিটেশন করা যাবে।
৩) ফিজিকাল ম্যুভমেন্ট
বাসায় থাকি বসে। সারাদিন। খালি খাইদাই। নো ফিজিক্যাল ম্যুভমেন্ট। যেভাবেই হোক, করতে হবে ভাই। বাসার এমাথা-ওমাথা হাটেন। বুক ডৌন দেন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করেন। আর ইয়োগা করলেও ক্যালরী বার্ণ হয়।
আরো পড়ুনঃ মহাকাশের শুরু কোথায়?
যারা সিগারেট খান, কমায়ে দেন ভাই। পারলে ছাইড়া দেন। এমনিতেই ফুসফুসের উপর আক্রমণ। আর সিগারেট খায়ে ফুসফুসটারে দুর্বল বানায়েন না। যতটুকু বানাইসেন ব্যস। থাকুক। করোনা যাক। আবারো খাবোনে পরে। না ছাড়তে পারেন, অন্তত শূণ্যর কাছাকাছি আনেন।
তো, এই হইলো বিষয়। গতকালকেও WHO বলেছে, “লকডাউন দিয়ে হয়তো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। এসব দিয়ে করোনাভাইরাস দূর করা যাবে না, মহামারি ঠেকানো যাবে না।” ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হইতে সময় লাগবে ১২-১৬ মাস। এর মাঝে একে পুরোপুরি নির্মূল করা যাবেনা। যেটা যাবে তা হলো, আপনাকে সংক্রমিত হইতে হবে, তাইলে শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়ে যাবে। এরপর আর ওই ভাইরাস আক্রমণ করবে না আপনাকে।
ঝামেলাটা এখানেই, ফাইট হয়তো আপনাকে দিতে হবেই। এখন হোক বা পরে হোক। ফাইট দেয়ার জন্য আর্মি তৈরী করেন শরীরে। বর্ডারে বিজিবির সংখ্যা বাড়ান।
যাইহোক, পরিবারে বাপ মা সহ বয়স্কদের দিকে নজর দেন। আত্নীয় স্বজনরে বলেন। বাঁচতে হবে ভাই। ন্যাচারাল সিলেকশনে বাদ পড়া যাবেনা। যেমনে হোক সারভাইভ করে যাইতে হবে এ যাত্রায়।
লেখাঃ এস এম নাঈমুল হাসান