আপনি যদি সবসময় অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং আপনার ইমেইলে আসা প্রতিটি ফাইল খুবই সতর্কতার সহিত চেক করে দেখে থাকেন তাহলে এখনি ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনি নিরাপদে আছেন। ভাইরাস কিন্তু চাইলে আপনার স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটে অনায়াসে এসে যেতে পারে৷ তাহলে চলুন দেখা যাক, আপনার ফোনে ভাইরাস আছে কিনা?
ফোনে কি ভাইরাস ধরে?
হ্যাঁ, অবশ্যই ভাইরাস ধরে, একটা কম্পিউটারে যেভাবে অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে, টেক্সট এসএমএসের মাধ্যমে অথবা ইমেইলের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করে ঠিক তেমনি আমাদের ফোনেও একইভাবে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে৷ সাধারণত, যখন কম্পিউটারে কোডটি সংক্রামিত হয়ে কোডটি স্ব-সদৃশ হয় এবং ডেটা নষ্ট করে অথবা সেই ডেটাকে অন্য ডিভাইসে পাঠানোর চেষ্টা করে তখন এটিকে ভাইরাস হিসাবে ধরা হয়।
আরো দেখুনঃ
- কিবোর্ড দিয়ে হ্যাক হয় আপনার পাসোয়ার্ড
- ডেল গ্রাহকদের তথ্য চুরির চেষ্টা
- অ্যান্টি ভাইরাস হয়ে পড়ছে অকার্যকর
- নিরাপদে ইমেইল চেক করুন
ফোনে ভাইরাস প্রবেশ করে কিভাবে?
খুব সহজেই ফোনে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে৷ আবার সেইসব ভাইরাসগুলোকে কিন্তু আমরাই নিজেরা ডেকে আনি। ভাইরাস সাধারণত, অ্যাপস, ইমেইলে আসা কোন ফাইল (এক কথায় অ্যাটাচমেন্টস), টেক্সট মেসেজ এমনকি কিছু কিছু ওয়েবসাইট থেকেও আপনার ফোনে প্রবেশ করতে পারে।
ফোনে কোন ধরনের ভাইরাস ধরে?
এটা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, আপনার ফোনে কোন ধরনের ভাইরাস আছে। তবে ফোনে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ধরতে পারে, এবং প্রতিটি ভাইরাসেরই কোন না কোন নাম অবশ্যই রয়েছে এবং সেই নামগুলো আমরা তুলে ধরছি৷ ভাইরাস কিন্তু আপনার ফোন ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাই তৈরি করে না, এটি কিন্তু আপনার অজান্তে ফাইল ডিলেট কিংবা চুরি, আপনার প্রাইভেট ডেটা এমনকি আপনার একাউন্ট থেকে টাকাও নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে৷
- অ্যাডওয়্যার – বিরক্তিকর অ্যাড(ওয়েব লিংক সহ) তৈরি করে যা নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।
- ম্যালওয়্যার – ফোনের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয় এবং ফোনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরিতে সাহায্য করে।
- রেন্সমওয়্যার – ফোনের ফাইল, তথ্য এবং অ্যাপ লক করে বিনিময়ে অর্থ দাবি করে।
- স্পাইওয়্যার – ফোনের কাজের গতিবিধি লক্ষ্য করে৷
- ট্রোজান হর্স – নিজেকে বৈধ অ্যাপ আকারে দেখায় এবং ফোনের প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে বাম হাত ঢুকায়।
ফোনে ভাইরাস আছে কিনা বুঝবো কিভাবে?
ফোনে ভাইরাস আছে কিনা বোঝার কিছু লক্ষণ এক নজরে দেখে ফেলুন।
- এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন দেখতে পাবেন যা আপনি ডাউনলোড করেন নি। ফোনে অপরিচিত কোন অ্যাপ রয়েছে কিনা একবার দেখে ফেলুন।
- বারবার ফোন ক্রাশ করে। যদি তা একবার কিংবা দুইবার করে তাহলেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু হয়নি৷ যদি ঘন ঘন ফোন ক্রাস করে তাহলে বুঝবেন ঘাপলা আছে৷
- ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। নরমালি ফোন ব্যবহার করার পরেও যদি আগের তুলনায় দ্রুত ব্যাটারি শেষ হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন ঘাপলা আছে৷
- অতিরিক্ত পপ আপ অ্যাড দেখালে। ভাইরাস আপনাকে বিরক্তিকর পপ আপ অ্যাড ঘন ঘন দেখাতে পারে৷
- ফোনের ডাটা ইউজেস বেড়ে যাওয়া। আপনি নরমালি ফোন ব্যাবহারের পরেও যদি দেখতে পান আপনার ফোনের ডাটা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে তাহলে বুঝবেন নিবেন ঘাপলা আছে৷
- ফোনের টাকা অহেতুক শেষ হয়ে যাওয়া। কিছু কিছু ম্যালওয়্যার ফোনের টেক্সট মেসেজ অপশনটি ব্যবহার করে তথ্য চুরি করে এবং এতে ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়।
আপনার যদি মনে হয় আপনার ফোনে ভাইরাস আছে তাহলে অতি দ্রুত ভাইরাস রিমুভ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফোনের ভাইরাস থেকে কিভাব রক্ষা পাব?
ফোনের ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আপনি অনেক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিন্তু গ্রহন করতে পারেন৷ যেমনঃ
আপটুডেট থাকুন সবসময়। একটি মানসম্মত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করুন। এবং অবশ্যই অবশ্যই ফোনের সিস্টেম আপডেট আসলে তা দ্রুত দিয়ে ফেলবেন।
এপ্রুভ করা অ্যাপস ব্যবহার করুন৷ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসের জন্য শুধুমাত্র গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড করবেন, আইওএসের জন্য হতে ডাউনলোড করবেন৷ এছাড়াও সতর্ক থাকবেন, ডাউনলোডের আগে রিভিউ, রেটিং এবং ডেভেলপার সম্পর্কে ধারনা নিয়ে নিবেন।
ইমেইল চেকে সাবধানতা৷ ইমেইলে আসা প্রতিটি এটাচমেন্ট সাবধানতার সহিত যাচাই করে খুলবেন৷ ইমেইল এড্রেসটি আগে ভালোভাবে যাচাই করে দেখুন৷ অপরিচিত হলে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম৷ এছাড়া ইমেইলে আসা লিংক গুলো খুঁতিয়ে দেখুন মাঝে মাঝে কিছু লিংকের মাধ্যমে আপনি প্রতারিত হতে পারেন এমনকি আপনার তথ্য সেইসব লিংকে গেলে চুরিও হতে পারে।
ভাইরাস নিয়ে টুকিটাকি
ভাইরাস হল এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অনুমতি বা ধারণা ছাড়াই নিজে নিজেই কপি হতে পারে। মেটামর্ফিক ভাইরাসের মত তারা প্রকৃত ভাইরাসটি কপিগুলোকে পরিবর্তিত করতে পারে অথবা কপিগুলো নিজেরাই পরিবর্তিত হতে পারে।
একটি ভাইরাস এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে যেতে পারে কেবলমাত্র যখন আক্রান্ত কম্পিউটারকে স্বাভাবিক কম্পিউটারটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমন: কোন ব্যবহারকারী ভাইরাসটিকে একটি নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে পারে বা কোন বহনযোগ্য মাধ্যম যথা ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভ বা ইণ্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
এছাড়াও ভাইরাসসমূহ কোন নেট ওয়ার্ক ফাইল সিস্টেমকে আক্রান্ত করতে পারে, যার ফলে অন্যান্য কম্পিউটার যা ঐ সিস্টেমটি ব্যবহার করে সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসকে কখনো কম্পিউটার ওয়ার্ম ও ট্রোজান হর্সেস এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। ট্রোজান হর্স হল একটি ফাইল যা এক্সিকিউটেড হবার আগ পর্যন্ত ক্ষতিহীন থাকে।
বর্তমানে অনেক পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) ইণ্টারনেট ও লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকে যা ক্ষতিকর কোড ছড়াতে সাহায্য করে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, ই-মেইল ও কম্পিউটার ফাইল শেয়ারিং এর মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমন ঘটতে পারে। কিছু ভাইরাসকে তৈরি করা হয় প্রোগ্রাম ধ্বংশ করা, ফাইল মুছে ফেলা বা হার্ড ডিস্ক পূণর্গঠনের মাধ্যমে কম্পিউটারকে ধ্বংশ করার মাধ্যমে।
অনেক ভাইরাস কম্পিউটারের সরাসরি কোন ক্ষতি না করলেও নিজেদের অসংখ্য কপি তৈরি করে যা লেখা, ভিডিও বা অডি ও বার্তার মাধ্যমে তাদের উপস্থিতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। নিরীহ দর্শন এই ভাইরাসগুলোও ব্যবহারকারীর অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক প্রোগ্রামগুলোর প্রয়োজনীয় মেমোরি দখল করে। বেশ কিছু ভাইরাস বাগ তৈরি করে, যার ফলশ্রুতিতে সিস্টেম ক্র্যাশ বা তথ্য হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
তথ্যসূত্রঃ
- উইকিপিডিয়া
- ছবিঃ সাটারস্টক
- লাইফওয়্যার