Back

বুক রিভিউঃ সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ

বইয়ের নাম: সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ
লেখক: মাসুদ মাহমুদ 

জীবনে প্রথম কোনো কৌতুকের বই পড়া। আমি সরাসরি বইয়ের ভূমিকাটি দিচ্ছি-

উৎকর্ষের বিচারে সোভিয়েত পণ্য বিশ্বের বাজাতে সমাদৃত না হলেও সোভিয়েত ব্যঙ্গ এবং কৌতুক বরাবরেই ছুল খুব উঁচু মানের। বস্তুত শাসন ব্যবস্থা যেখানে যত কঠোর, কৌতুক রচনার বিষয়বৈচিত্র্য সেখানে তত ব্যাপক। আর এই সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে কৌতুক – এবং পরিহাস প্রিয় সোভিয়েত জনগন। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়েনর পঁচাত্তর বছরের স্থায়িত্বকালে (১৯১৭-১৯৯১) সে দেশে যে পরিমান ব্যঙ্গ কৌতুক রচিত হয়েভহে, অন্য কোন দেশে কৌতুকের তেমন প্রবল চর্চা কখনো হয়েছে বা হয় বলে বোধ হয় না।

সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ
4

মূল বক্তব্য

ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক সাংবাদিক হাঙ্গেরিয় ব্যঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক টিবোর ফরকাশকে প্রশ্ন করেছিলেন: প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় ব্যঙ্গ কৌতুকে মান আকিস্মিক পতনের কারন কী? তিনি উত্তর দিয়েছিলন, “কৌতুক রচনা বা পরিবেশনের দায়ে হাজতবাসের আশঙ্কা থাকলে কৌতুক হয় অধিকতর সূক্ষ এবং ব্যঙ্গাত্মক।”
ফরকাশ অতিরঞ্জন করেননি এতটুকুও। কৌতুক রচনা বা বলার কারনে লোকজনকে কারগারে কিংবা শ্রমশিবিরে পাঠানো শুরু করেছিল স্তালিন। ক্রুশ্চেব এবং ব্রেঝনেভ জিইয়ে রেখেছেলিন সেই এতিহ্য। কিন্তু থেমে থাকেনি কৌতুক রচনা এবং প্রচার।
সোভিয়েতরা তাদের প্রায়-নিরানন্দ জীবনে জীবনে খুজে পেত মূলত দুইটি জিনিসে: ভেদকা এবং কৌতুক। এ দুটোই ছিলো তাদের জন্য ভয়াবহ বাস্তব থেকে আত্মরক্ষার কিংবা সাময়িকভাবে হলেও পালিয়ে যাবার একটি উপায়বিশেষ। ভেদকা পানের পাশাপাশি কৌতুক পরিবেশন ছিলো একটি ক্লাসিক ব্যপার।
পুজিবাদি ও গনতান্ত্রিক সমাজে সাধারন লোককে আহার, বাসস্থান, কর্ম ও চিকিৎসার সংস্থানের চিন্তায় ব্যস্ত থাকতে হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সমাজে এসব মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা থাকায় নির্ধার মস্তিষ্কে কৌতুক রচনার ও চর্চার সুযোগ পেয়েছিল সে সমাজের জনগণ।


মূলত আত্মবিশ্লেষন সোভিয়েত ব্যঙ্গ – কৌতুকের ধরন এবং মাত্রা কিছুটা ভিন্নতর। এর প্রধান কারণ, এসবের জন্ম একেবারেই শাসকগোষ্ঠীর অগোচরে এবং নেপথ্যে ; প্রচার এবং প্রসার গোপনে, সন্তর্পণে। অনেক কৌতুকই হয়তো তুমুল হাসির নয়, কিন্তু সেগুলো তীব্র শ্লেষাত্মক এবং নির্ভূল লক্ষ্যভেদী। অনেকগুলোই ভাবনার খোরাক যোগায়। কিছু কৌতুক আছে, যেগুলি যতটা না হাস্যকর, তারচেয়ে বেশি করুন, মর্মস্পর্শী। বিশাল সম্পদের মালিক এক দেশের অক্ষম, অর্থব নেতাদের অদূরদর্শীতা, নির্বুদ্ধিতা, খামখেয়ালি আচরণ এবং পরিনতিতে সমাজের অপরিসীম দুর্দশা এসব কৌতুকের উপজীব্য।
কৌতুক হল মৌখিক সাহিত্য। এই মৌখিক রচনাগুলোকে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করার অনেকগুলো অসুবিধেজনক দিক আছে। সবাই জানে, শুধু বক্তব্যের মধ্যেই কৌতুকের মহাত্ম্য নিহিত নয়। কিন্তু বর্ণনাকারির পরিবেশন ধরন, প্রয়োজনীয় বিরতি, কথার সুর, ইশারা, বিশেষ শব্দ বা শব্দমালার উপর জোর দেওয়া ইত্যাদি ছাপার অক্ষরে পাঠকের কাছে পৌছে দেয়া সত্যিকার অর্থেই অসম্ভব। এই অপূর্ণতাটুকু কল্পনা দিয়ে পূরন করে নিতে হবে পাঠককে।
বইটির নাম রাখা হয়েছে বাংলা এবং রুশ ভাষার উৎকট সন্ধি করে। ব্যাকরণগত শুদ্ধতা তাতে, স্বাভাবিক কারনেই নেই।
লঘু চরিত্রের এই বইকে ভূমিকা এবং ধারাভাষ্যকন্টকিত করা উচিত ছিল না। কিন্তু উপায় ছিল না, না করেও।

লিখেছেনঃ মাসুক আহম্মদ (সাস্টিয়ান বই পোকা থেকে সংগ্রহীত) 

কিউরেটর
কিউরেটর
https://notunblog.com/
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্য সংবাদ ও খবর পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত।