Back

গোপাল ভাঁড়ের আসল পরিচয় কি?

গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্যযুগের একজন রম্যগল্পকার। তাঁর অপর নাম গোপাল ভাণ্ড। অষ্টাদশ শতাব্দিতে নদিয়া জেলার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের (১৭১০-১৭৮৩) রাজসভায় তিনি ভাঁড় বা মনোরঞ্জনকারী ছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে সভাসদদের মধ্যে অন্যতম নবরত্ন হিসেবে মর্যাদা দিয়েছিলেন।

নবরত্ন গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। তিনি বাস্তবে ছিলেন কিনা সেই বিষয়েও বিতর্ক আছে। হাস্যরসিক গোপাল ভাঁড়, শাক্তপদাবলিকার রামপ্রসাদ সেন ও অন্নদামঙ্গল রচয়িতা ভারত চন্দ্র রায়গুণাকর ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের নবরত্ন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বাংলায় জগদ্ধাত্রি পূজা ও নবদ্বীপে শাক্তরাস প্রচলন করেছিলেন।

জনশ্রুতি আছে নবাব আলীবর্দী খানকে রাজকর দিতে না পারায় ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কারাগারে অন্তরীণ হন। সময়টা তখন দুর্গাপূজার কাছাকাছি। নবাবের কারাগার থেকে যখন তিনি মুক্ত হলেন, তখন কৃষ্ণনগর ফেরার পথে তিনি বুঝলেন বিজয়া দশমী চলছে।

পথিমধ্যে নৌকায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখেন এক রক্তবর্ণা চতুর্ভুজা কুমারী দেবী তাঁকে বলছেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লানবমী তিথিতে তাঁর পুজো করতে। ফলে প্রচলন হয় জগদ্ধাত্রী পূজার। এর পরের বছর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজার প্রচলন হয় তার সুহৃদ ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরীর হাত দিয়ে। এছাড়া মালোপাড়া জগদ্ধাত্রীর (মা জলেশ্বরী) প্রতিমা পূজার সূচনা করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র।

গোপালের জন্ম কত বঙ্গাব্দে তা কোথাও উল্লেখ নেই। অনেকে মনে করেন গোপাল নামে কেউ আদৌ ছিলেন না। তবে কোনো না কোনো বিদূষক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন। সেরকম গোপাল নামে কোনো নাপিত বংশীয় কোনো ব্যক্তি থাকতে পারেন বলে অনেকের বিশ্বাস। গোপালের জন্ম বা জন্মস্থান কোথায় সেবিষয়ে কোথাও সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। এমনকি কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা হিসেবে তার অবস্থানের বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

প্রায় দুইশো বছরের অধিক আবহমানকাল ধরে প্রচলিত তাঁর জীবনরসসমৃদ্ধ গল্পগুলো দুই বাংলার বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মুখরোচক গল্প হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। তাঁর বেশ কয়েকটি গল্প প্রবাদের মতো ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধ্যযুগে খনার বচন যেমন প্রসিদ্ধ, তেমনই প্রসিদ্ধ গোপালের জীবনমুখী গল্পগুলো। বলা বাহুল্য, হুগলির খানাকুল থেকে গোপালকে নবরত্ন হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র।

দুই বাংলার রসের হাঁড়ি খ্যাত এই গোপাল ভাঁড় ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ। তিনি তাঁর হাস্যরসের মধ্য দিয়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে সবসময় খুশি রাখতেন। উনবিংশ শতাব্দির বটতলার সাহিত্যে প্রথম গোপাল ভাঁড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। দুই বাংলার ইতিহাসে, এমনকি সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসেও, অল্প হলেও দেখা যায় যে, সমষ্টিগতভাবে জনগণের উপস্থিত বুদ্ধি ও জ্ঞান কোনো অতীত লোকের নামে প্রচলিত হয় এবং কালক্রমে তিনিই হয়ে ওঠেন নায়ক। গোপাল ভাঁড় হয়ত এমনই কাল্পনিক ব্যক্তি। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেহরক্ষী হিসেবে শঙ্কর তরঙ্গ নামে এক ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি ও জ্ঞানের জন্য রাজা অনেক সময় তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দিতেন। হয়ত তিনি পরবর্তী কালে গোপাল ভাঁড় হিসেবে কল্পিত হয়েছেন।

সূত্রঃ

  • ভেরিফাইড প্রেস 
কিউরেটর
কিউরেটর
https://notunblog.com/
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্য সংবাদ ও খবর পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত।