বর্তমান ডিজিটাল যুগে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে—ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যাংকিং, কেনাকাটা, পড়াশোনা এমনকি পেশাগত কাজেও এটি নিয়মিত সঙ্গী। কিন্তু স্মার্টফোন যত সহজলভ্য হচ্ছে, ততই বাড়ছে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের ঝুঁকি। বিশেষ করে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করার সুবিধা থাকায় অনেক সময় অজান্তেই ক্ষতিকর অ্যাপ ফোনে ঢুকে পড়ে, যা আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে বা ফোনের পারফরম্যান্স নষ্ট করতে পারে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই! এই ব্লগে আমরা এমন কিছু সহজ ও কার্যকর ধাপ আলোচনা করব, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি নিরাপদে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। পরবর্তী অংশে ধাপে ধাপে জানবো ভাইরাস চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে সুরক্ষার পরামর্শ পর্যন্ত সবকিছু।
আরো পড়ুন
১. প্রথমে বুঝে নিন—আপনার ফোনে সত্যিই ভাইরাস আছে কি না
ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- ফোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ধীরে কাজ করা
- অ্যাপ ওপেন হতে দেরি
- অস্বাভাবিক বিজ্ঞাপন দেখা
- অজানা অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাওয়া
- ডেটার ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া
- ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়া
- ইন-অ্যাপ পারচেস বা অজানা ট্রানজ্যাকশন
উপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা গেলে সতর্ক হওয়া জরুরি।
২. ফোনটি Safe Mode-এ চালু করুন
Safe Mode হলো অ্যান্ড্রয়েডের একটি বিশেষ মোড, যেখানে শুধু সিস্টেম অ্যাপগুলো চলে এবং ভাইরাসযুক্ত থার্ড-পার্টি অ্যাপ নিষ্ক্রিয় থাকে। এই মোডে গেলে সন্দেহজনক অ্যাপ সহজে সরানো যায়।
Safe Mode চালু করার উপায়:
- পাওয়ার বোতাম টেপ করে ধরে রাখুন
- ‘Restart’ অথবা ‘Power Off’ অপশন আসলে সেটি ধরে রাখুন
- ‘Reboot to Safe Mode’ নামক অপশন এলে OK চাপুন
- স্ক্রিনের নিচে “Safe mode” লেখা আসলে বুঝবেন মোডটি সক্রিয় হয়েছে
৩. ভাইরাসযুক্ত বা অচেনা অ্যাপ আনইনস্টল করুন
Safe Mode সক্রিয় হলে, এখন ভাইরাস সনাক্ত এবং সরানোর পালা।
কাজের ধাপগুলো:
- যান Settings > Apps > See all apps
- তালিকাটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। অজানা বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর নাম নোট করুন
- কোনো অ্যাপ সন্দেহজনক মনে হলে সেটিতে ক্লিক করুন
- Uninstall > OK চাপুন

যদি Uninstall অপশন নিষ্ক্রিয় থাকে (গ্রে রঙের দেখায়) এর মানে অ্যাপটি Admin Access পেয়েছে। এই অ্যাপটি আনইনস্টল করতে:
- যান Settings > Security > Device admin apps
- সমস্যা তৈরি করা অ্যাপের অ্যাডমিন অনুমতি অফ করে দিন
- এরপর আবার Uninstall করুন

৪. Safe Mode থেকে বের হয়ে আসুন
যত অ্যাপ মুছে ফেলার প্রয়োজন, তা শেষ হলে ফোনটি রিস্টার্ট দিন। এটি স্বাভাবিক মোডে ফিরে আসবে।
৫. শেষ উপায়: Factory Reset করুন (যদি উপরের পদ্ধতি কাজ না করে)
যদি আপনার ফোনে ভাইরাস এতটাই গভীরে প্রবেশ করে যায় যে Uninstall করেও সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে Factory Reset একমাত্র সমাধান।
Factory Reset করার ধাপ:
- যান Settings > System > Reset > Factory data reset
- ডিভাইস রিসেট করার আগে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলো Google Drive বা PC তে ব্যাকআপ করে নিন
- ‘Erase all data’ সিলেক্ট করুন এবং নির্দেশ অনুসরণ করুন
এই পদ্ধতি ফোনকে একদম নতুন অবস্থায় ফিরিয়ে নেবে। তবে, এটি আপনার ফোন থেকে সব ডেটা মুছে ফেলবে।
৬. ভবিষ্যতের ভাইরাস আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কার্যকরী টিপস
- ✓ অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম এবং অ্যাপস সবসময় আপডেট রাখুন নতুন আপডেটগুলোতে নিরাপত্তার দুর্বলতা ঠিক করা হয়।
- ✓ Google Play Protect চালু রাখুন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান করে ক্ষতিকর অ্যাপ সনাক্ত করে।
- ✓ অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করুন Bitdefender, Avast, Norton, বা Kaspersky-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করা নিরাপদ।
- ✓ অজানা উৎস থেকে APK ফাইল ডাউনলোড করবেন না সাধারণত Google Play Store ব্যবহার করুন। APK দরকার হলে শুধুমাত্র বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
- ✓ ক্লোন অ্যাপ বা ভুলভাল বিজ্ঞাপন থেকে সতর্ক থাকুন যে অ্যাপটি পরিচিত, কিন্তু ডেভেলপার ভিন্ন দেখাচ্ছে—তা ক্লোন অ্যাপ হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখা শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞান নয়—এটি মূলত সচেতনতামূলক অভ্যাসের ফল। তাই, আপনি যদি উপরোক্ত ধাপগুলো নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাহলে নিজের ফোন এবং ডেটাকে অনেকখানি নিরাপদ রাখতে পারবেন। এছাড়াও, সন্দেহজনক অ্যাপ না ইনস্টল করা, শুধু বিশ্বস্ত উৎস থেকে ফাইল ডাউনলোড করা এবং গুগল প্লে প্রোটেক্ট চালু রাখার মতো ছোট ছোট সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতে বড় ক্ষতি থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন, একটি ভাইরাস শুধু আপনার ফোনকেই ধ্বংস করতে পারে না—এটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ এবং এমনকি আর্থিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অতএব, নিজের প্রযুক্তিকে ভালোবাসুন, তাকে নিরাপদ রাখুন। আপনি সচেতন থাকলে প্রযুক্তি আপনাকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে—নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে।
আপনার ফোনের নিরাপত্তা মানেই আপনার ব্যক্তিগত ডেটার নিরাপত্তা—এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখুন। ভবিষ্যতে আরও সুরক্ষিত ডিভাইস ব্যবহারের জন্য নিয়মিত আপডেট ও নিরাপদ ব্যবহার অভ্যাস গড়ে তুলুন।